বাংলা একাডেমিতে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ফররুখ আহমদের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। ‘ফররুখ আহমদকে আমরা কীভাবে পড়ব’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. কুদরত-ই-হুদা।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি ও বাংলা একাডেমির ফেলো আবদুল হাই শিকদার এবং কবি সোহেল হাসান গালিব।
অনুষ্ঠানে ফররুখ আহমদের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন কবিপুত্র সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
ড. সরকার আমিন বলেন, ‘ফররুখ আহমদ বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাকে আমরা অর্জন করেছি। একইসাথে তাকে ধারণ করা বাংলা কবিতার জন্যই জরুরি।’
ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, ‘ইতিহাসের পটে রেখে ফররুখের পাঠ দেয়া দরকার। ফররুখকে অস্বীকার করলে তো এই জনগোষ্ঠীর এক সময়ের আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে, আত্মমর্যাদার বাসনাকে অস্বীকার করা হয়। বাংলাদেশের কবিতার বিকাশের যে ধারা, তার যে চড়াই-উৎরাই, সংগ্রাম, ঘাত-প্রতিঘাত তাকেই অস্বীকার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ফররুখ আহমদকে আমাদের প্রগতিশীলদের অপরায়ণ’ ও প্রতিক্রিয়াশীলদের অন্ধ-আদরায়ণ প্রক্রিয়ার বাইরে নিয়ে এসে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ইতিহাসের ধারার মধ্যে ঠিকঠাকভাবে স্থাপন করা দরকার। ফররুখ আমাদের বহুস্বর ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বর হিসেবে আদরণীয় হোক- এই আমাদের প্রত্যাশা।’
সভায় আলোচকরা বলেন, ‘ফররুখ আহমদকে বিবেচনা করতে হলে তার সময় এবং পরিপার্শিকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি ব্যক্তিগত কবিতা সাধনায় নিজ জনগোষ্ঠীর আত্মমর্যাদা ও আত্মমুক্তির প্রসঙ্গকে আত্মীকৃত করেছেন অনায়াসে।’
তারা বলেন, ‘বাংলা কবিতার আকাশে ফররুখ আহমদ এক দীপ্ত নক্ষত্রের নাম। তিনি পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষের মাটির স্বরকে তার সাহিত্যে ধারণ করেছেন। তাকে পাকিস্তানবাদের কবি বলে ভুল প্রচারণা চালানো হয়, তিনি মূলত পূর্ববাংলার মানুষের জন্য সুষম সমাজ চেয়েছেন। ইসলাম ও সমাজতন্ত্রের উপাদান একীভূত করে তিনি মানবমুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন এবং সারাজীবনের কবিতাচর্চায় তার পাঠককে সেই স্বপ্ন দেখার পরিসর তৈরি করেছেন।’
সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা থেকে ফররুখ আহমদের সাথে নিবিড় নৈকট্য অনুভব করেছে। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম কবি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে একাডেমি ফররুখ-চর্চা করলেও গত কয়েক দশক তা স্তিমিত ছিল। আমরা আনন্দিত বহুদিন পর হলেও একাডেমি ফররুখ আহমদের ইন্তেকালের অর্ধশতবার্ষিকী স্মরণে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।’
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘ফররুখ আহমদের কবিতাস্বরের মধ্যে এমন এক অন্যতার শক্তি আছে যা তাকে সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বিশেষ স্থান দান করেছে। তিনি বাংলাদেশের কবিতা ও সাহিত্যালোচনায় সবসময়ই প্রাসঙ্গিক ছিলেন। তবে সাহিত্যের একার্থতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা ফররুখ আহমদসহ অনেক জরুরি সাহিত্যিকদের পাঠে যথাযথ মনোযোগী হইনি। আমরা আশা করি, বহুস্বরময় বাংলাদেশে ফররুখ আহমদকে পাঠের নতুন নতুন প্রস্তাব তৈরি হবে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক কাজী রুমানা আহমেদ সোমা।