নিজ দলের হাতে নেতাকর্মী খুনে চুপ কেন বিএনপি
অথচ জুলাই অভ্যুত্থান আরও অনেক সম্ভাবনার সঙ্গে ৫৪ বছরের রাজনীতির সঙ্গে একটা স্পষ্ট ছেদবিন্দু আঁকার সুযোগ সামনে নিয়ে এসেছে। এই সুযোগ হুট করে রূপকথার গল্পের মতো একদিন সকালে আসেনি। জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে, যাদের বড় একটা অংশ শিশু ও ৩০ বছরের কম বয়সী, এই সুযোগ এসেছে। অভ্যুত্থানের পরপরই আমরা দেখেছি, কোন দলের কতজন নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন, সেই তালিকা নিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যুত্থানে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করছে। কিন্তু অভ্যুত্থানের যে স্পিরিট সেটাকে ধারণ করে নিজেদের চর্চা পাল্টানোর তাগিদ কার মধ্যে কতটা দৃশ্যমান?
জাহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডটি রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে কি না, সেটা বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু ৫ আগস্টের পর গত সাড়ে আট মাসে দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কিন্তু থেমে নেই; বরং যেকোনো বিবেচনাতেই এ সংখ্যা আশঙ্কাজনক। আর সবচেয়ে বেশি হত্যার শিকার হয়েছেন বিএনপির কর্মীরা, সেটা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাতে যতটা, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি নিজেদের কোন্দলে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) গত ২৫ এপ্রিলের তথ্য বলছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) সারা দেশে অন্তত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ২৭ জন, আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ৫ জন এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংঘর্ষে ২ জন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি পত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের রাউজান, মিরসরাই ও আনোয়ারা উপজেলায় গত ৮ মাসে প্রায় ৮০টি ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১০ কর্মী খুন এবং অন্তত ৩৫০ জন আহত হয়েছেন।
১২ এপ্রিল দৈনিক সমকালের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আট মাসে দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বিএনপির ৫১ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।