নতুন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নেতৃত্বে নেওয়া পদক্ষেপগুলো শেয়ারবাজারে প্রত্যাশিত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং, বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গিয়ে বাজারের ধস আরো প্রকট হয়েছে।
সরকার পতনের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও বিনিয়োগকারীরা আবারও হতাশার মধ্যে পড়েছেন। বেশিরভাগ শেয়ারের দাম প্রতিদিনই কমছে, এবং অনেকের বিনিয়োগ কার্যত আটকে গেছে।
বাজারের ক্রমাগত ওঠানামা
বাজারে অস্থিরতা চক্রাকারে চলছে। একদিন সূচক বাড়লেও পরবর্তী তিন দিন তা আবার নিম্নমুখী হয়। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের ক্ষত এখনো বিনিয়োগকারীদের মনে তাজা, এবং ১৫ বছরের মধ্যে আস্থার সূচক সবচেয়ে নিচে।
বাজারে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। যদিও কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, তবে এ নিয়ে নানা ধরনের গুজব এবং অনুমানের সৃষ্টি হয়েছে।
এসইসি’র নতুন নেতৃত্বের পদক্ষেপ
নতুন নেতৃত্বে এসইসি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ২৭টি কোম্পানিকে “জেড” ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। এতে শেয়ারের মূল্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিনিয়োগকারী রঞ্জন দাস বলেন, “নতুন কমিশনের অধীনে কিছু শেয়ারের দাম বেড়েছে, কিন্তু এর কারণ পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।”
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রতারণা বন্ধ করাই বাজার পুনরুদ্ধারের মূল উপায়।”
বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ
বাজারে ক্রমাগত পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ ও সমাবেশ করছে। এসইসি’র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে তারা বিক্ষোভ করেছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
শেয়ারবাজারের স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। তবে বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড এবং বন্ড মার্কেট উন্নয়নের অভাবে বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আস্থা ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা প্রয়োজন।”
আস্থার সংকট ও পুনর্গঠন
ডিএসই’র সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, “বাজারে আস্থা ফেরাতে নেতৃত্বে ভারসাম্য আনতে হবে। কিছু আইন ও নিয়ম পরিবর্তন করা দরকার।”
এসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, “বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না কমিশন। কিন্তু কোনো ধরনের অনিয়ম বা কারসাজি ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শেয়ারবাজারের বর্তমান সংকট নিরসনে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণই বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ।