‘বাচ্চাটি যাবে না, ম্যাডাম’: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৯ মাসের সন্তানের সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ

কাঁপা গলায় মুসাইব বলেন, ‘মা কখনো একা কোথাও যাননি। আমি জানি না, উনি কীভাবে এই ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে করাচি পৌঁছাবেন।’
করাচিতে হালিমার যাওয়ার মতো কোনো ঘর নেই। তাঁর মা–বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তাঁর একমাত্র ভাই নিজের ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে মাত্র দুটি কক্ষে থাকেন।
চোখ মুছতে মুছতে হালিমা বলেন, ‘হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। কিন্তু একটারও উত্তর নেই। আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করি—আমার সন্তানদের যেন রক্ষা করেন। খুব শিগগির আবার এক হব আমরা।’
রাতারাতি টানা সীমান্তে ভাগ হয়ে যাওয়া মানুষের গল্প নিয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় ‘মিডনাইটস বর্ডারস’ বইটি। এর লেখিকা সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে এমন অসংখ্য হৃদয়বিদারক কাহিনি ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।
সুচিত্রার মতে, ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকে যেসব মুসলিম নারী ভারত কিংবা পাকিস্তানে জন্ম নিয়ে অন্য দেশের পুরুষদের বিয়ে করে সেদিকে চলে গেছেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বিশেষ করে যখন তাঁদের জোর করে ফেরত পাঠানো হয়, তখন তাঁদের অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তে হয়।
‘(বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর) আপনি এমন এক জায়গায় বন্দী হয়ে পড়েন, যা আর আপনার ঘর নয়—অথবা এমন একটা ঘর, যেটাকে আপনি চিনতেও পারেন না। নির্বাসন হয়ে ওঠে আপনার জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা’, বলেন সুচিত্রা।
সায়রা ও ফারহানের মতো করে বিগত কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বহু পরিবার এ আশায় বুক বেঁধে থেকেছে যে অচিরেই তারা আবার মিলিত হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবে তা ঘটেনি।
সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, ‘সবচেয়ে বেদনাদায়ক যে কথা বারবার শুনবেন, সেটা হলো—অনেকে ভেবেছিলেন যে তাঁরা সাময়িকভাবে যাচ্ছেন।’