মানুষের স্বপ্নের কোনো শেষ নেই। আর সেই স্বপ্নের একদম শীর্ষে যদি কিছু থাকে, তবে সেটি নিঃসন্দেহে মাউন্ট এভারেস্ট। ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার উচ্চতার এই শৃঙ্গ জয় করা বহু পর্বতারোহীর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। কিন্তু যদি বলা হয়, মাত্র এক সপ্তাহেই আপনি এভারেস্ট জয় করতে পারেন—আপনি কি বিশ্বাস করবেন?
এই অসম্ভবকে সম্ভব করার দাবি নিয়ে এসেছে একটি বাণিজ্যিক পর্বতারোহণ সংস্থা। তারা বলছে, জেনন গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরকে দ্রুত অভিযোজিত করে মাত্র সাত দিনে এভারেস্ট জয় করানো সম্ভব।
ইতিহাস বলে যা
১৯৫৩ সালে যখন তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি প্রথম এভারেস্ট জয় করেছিলেন, তাঁদের প্রস্তুতি এবং অভিযানের জন্য লেগেছিল দুই মাসেরও বেশি সময়। কারণ এভারেস্টে ওঠা মানে শুধু চূড়ায় পৌঁছানো নয়—এর মানে হলো ধাপে ধাপে শরীরকে প্রস্তুত করা, কম অক্সিজেনে বাঁচতে শেখা এবং সর্বোচ্চ মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলানো।
বর্তমানে শেরপা ও গাইডিং কোম্পানিগুলোর সহায়তায় অনেকেই এই শৃঙ্গ জয় করেন, কিন্তু সময়সীমা এখনও প্রায় একই। সাধারণত কাঠমান্ডু থেকে বেজক্যাম্পে যেতে লাগে এক সপ্তাহ, এরপর অভিযোজন, দড়ি টানা, ক্যাম্প স্থাপন ইত্যাদি মিলিয়ে আরো ৪০ দিন সময় লাগে।
নতুন ভাবনা, পুরোনো সংশয়
এই প্রচলিত প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার এক নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন অস্ট্রিয়ান পর্বতারোহণ গাইড লুকাস ফুর্টেনবাখ। তাঁর দাবি, শ্বাসের মাধ্যমে জেনন গ্যাস গ্রহণ করে শরীরে দ্রুত অভিযোজন ঘটানো সম্ভব। ফলে দীর্ঘ সময় পাহাড়ে কাটিয়ে শরীরকে খাপ খাওয়ানোর দরকার নেই।
ফুর্টেনবাখের পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রা শুরু হবে লন্ডন থেকে। সেখান থেকে সরাসরি নেপালের কাঠমান্ডু, এরপর হেলিকপ্টারে এভারেস্ট বেজক্যাম্প। তারপর কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ার পথে যাত্রা। খরচ? জনপ্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
জেনন গ্যাস কী করে?
জেনন গ্যাস সাধারণত একটি চেতনানাশক। তবে প্রায় এক দশক আগে গবেষণায় দেখা যায়, এটি শরীরে ইরিথ্রোপয়েটিন (EPO) নামক প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে পারে। এই প্রোটিন রক্তে লোহিত কণিকা ও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে, যা অক্সিজেন পরিবহন বাড়িয়ে স্বল্প অক্সিজেনে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
সাধারণত এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে শরীরে ঘটতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু জেনন গ্যাস ব্যবহারে সেই সময়টা কমিয়ে আনা সম্ভব বলেই ফুর্টেনবাখের দাবি।
বিজ্ঞান কী বলছে?
যদিও ফুর্টেনবাখ নিজে কয়েকটি অভিযানে সফলভাবে জেনন গ্যাস ব্যবহার করেছেন বলে জানান, এখন পর্যন্ত এই গ্যাসের কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতাজনিত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু পিকক বলেন, “শুধু EPO বাড়ালেই হবে না, আসল প্রশ্ন হলো—এই বৃদ্ধিটা কি এত অল্প সময়েই কার্যকর হতে পারে?”
দ্রুত মানেই নিরাপদ?
ফুর্টেনবাখের যুক্তি অবশ্য খুব সরল—যত কম সময় আপনি পাহাড়ে থাকবেন, তত কম আপনার ঝুঁকি। দীর্ঘ অভিযানের ফলে যে বিরূপ আবহাওয়া, তুষারধস বা শারীরিক জটিলতার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তা এড়ানো সম্ভব হবে দ্রুত অভিযান দিয়ে।
২০২৫ সালের মে মাসে তিনি তাঁর চারজন ব্রিটিশ ক্লায়েন্টের নিয়ে প্রথম এই “সপ্তাহব্যাপী এভারেস্ট অভিযান” পরিচালনা করতে যাচ্ছেন।
শেষ কথা
তাহলে, এক সপ্তাহে এভারেস্ট জয় কি সত্যিই সম্ভব?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দেওয়া কঠিন। প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অভিযাত্রার অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে এটাই বলা যায়—এই উদ্যোগ সাহসী, কিন্তু তার সাফল্য বা নিরাপত্তা এখনো প্রমাণের অপেক্ষায়। জেনন গ্যাস হয়তো ভবিষ্যতের অভিযোজন কৌশল বদলে দিতে পারে, কিন্তু আপাতত এটি বিজ্ঞানের আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আপনি কি এক সপ্তাহে এভারেস্ট জয় করার প্রস্তাবে সায় দেবেন?