অর্থ ও বাণিজ্য

শ্রীলঙ্কার জন্য আইএমএফের নতুন কিস্তি অনুমোদন, বাংলাদেশের অপেক্ষা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শ্রীলঙ্কার ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ে কিছুটা সময় নিচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আইএমএফের কর্মী পর্যায়ের একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংস্কারে অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করায় আইএমএফ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে শ্রীলঙ্কা পাবে পঞ্চম কিস্তির ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ নিয়ে আইএমএফ মিশনপ্রধান ইভান পাপাজর্জিও এক বিবৃতি দিয়েছেন, যা শুক্রবার আইএমএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ২০২৪ সালের জুনে বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে সর্বশেষ (তৃতীয়) কিস্তির অর্থ পেয়েছে। এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩১ কোটি ডলার। বাকি রয়েছে ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, কিন্তু তা তখন পাওয়া যায়নি। এখন বাংলাদেশ আশা করছে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ২০২৫ সালের জুনে পাবে।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কে আইএমএফ বলছে, দেশটি জিডিপি সংকোচন থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পথে ফিরেছে। রাজস্ব আহরণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং কাঠামোগত সংস্কারে শ্রীলঙ্কা ভালো করছে। ঋণ পুনর্গঠনের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। সরকার তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়ে এবং সরকারের পতন ঘটে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আইএমএফের সহায়তায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নেয় এবং ২০২৩ সালের মার্চে আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে। এখন পর্যন্ত দেশটি চার কিস্তির অর্থ পেয়েছে এবং পঞ্চম কিস্তির জন্য প্রাথমিক অনুমোদন অর্জন করেছে।

আইএমএফের প্রতিনিধিদল ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কা সফর করে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল সব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার পণ্যের ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ফলে তখন আইএমএফ কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে কোনো চুক্তি করেনি। পরে ৯ এপ্রিল ট্রাম্প তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত করলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয় এবং চুক্তি সম্পন্ন হয়। যদিও আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যের এই অনিশ্চয়তা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।

প্রাথমিক চুক্তিতে আইএমএফ আরও জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কাকে বিদ্যুৎমূল্য সমন্বয়, করছাড় কমানো এবং রিজার্ভ বাড়ানোর কাজ এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তামূলক কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে শ্রীলঙ্কার পোশাক খাতের প্রায় তিন লাখ কর্মী ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে শ্রীলঙ্কার ৩.৫% প্রবৃদ্ধি হতে পারে। গত বছরের অক্টোবরেও একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫%।

ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিদল শুল্ক ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশের আশাবাদ

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি চলছে, যা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। সম্প্রতি ঢাকায় সফর করা আইএমএফ মিশন জানিয়েছে, আলোচনা অব্যাহত রয়েছে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের জুনের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পেতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

Related Articles

Back to top button